আপনি কি প্রবাসী-প্রেরিত অর্থ কি তা জানেন না তাহলে সঠিক জায়গায় এসেছেন কেননা এই পোস্টে প্রবাসী-প্রেরিত অর্থ ও বাংলাদেশের রেমিট্যান্স খাত এবং রেমিট্যান্স বোনাস কত ইত্যাদি সম্পর্কে আপনাদের জানাবো। আপনি যদি প্রবাসী-প্রেরিত অর্থ এবং বাংলাদেশের রেমিট্যান্স সম্পর্কে A to Z বিস্তারিত জানতে চান তাহলে এই পোস্টটি মনোযোগ সহকারে প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পড়তে থাকুন।
প্রবাসী-প্রেরিত মানে হচ্ছে রেমিট্যান্স আর রেমিট্যান্স যোদ্ধা মানে প্রবাসী-প্রেরিত। যেসব বাংলাদেশী ভাইয়েরা প্রবাস থেকে কষ্টের টাকা বাংলাদেশে পাঠিয়ে থাকে তাদেরকেই মূলত প্রবাসী-প্রেরিত বা রেমিট্যান্স যোদ্ধা বলা হয়ে থাকে। আমরা অনেকেই প্রবাসী-প্রেরিত অর্থ এবং বাংলাদেশের রেমিট্যান্স খাত সম্পর্কে জানিনা তো চলুন বেশি দেরি না করে প্রবাসী-প্রেরিত এবং রেমিট্যান্স বাংলাদেশ সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
রেমিট্যান্স কি এবং রেমিট্যান্স কাকে বলে
রেমিট্যান্স শব্দটির সাথে আমরা কম বেশি সকলেই পরিচিত কিন্তু রেমিট্যান্স আসলে কি তা অনেকেই হয়তো জানি না রেমিট্যান্স সম্পর্কে আলোচনা করা হবে রেমিট্যান্স কি কেন কিভাবে এই আর্টিকেলে পর্বে। রেমিট্যান্স শব্দটির রেমিট শব্দ থেকে এসেছে যার অর্থ ফেরত পাঠানো। বিদেশে কর্মরত ব্যক্তিরা নিজ দেশে পরিবার বা আত্মীয়দের কাছ থেকে অর্থ পাঠায় তাকে রেমিট্যান্স বলে।
অধিক বেতন উন্নতকর্ম পরিবেশ এবং উন্নত জীবনের আশায় মানুষ নিজ দেশ ছেড়ে অন্যান্য দেশে পাড়ি জমায়। এসব প্রবাসীদের পাঠানো অর্থ একটি দেশের অর্থনীতিতে সমৃদ্ধ করে। রেমিট্যান্স বৃদ্ধির সাথে সাথে দেশের মাথাপিছু আয় এবং জিডিপি বৃদ্ধি পায়। ব্যাংকিং চ্যানেলে বিদেশ থেকে আসা সকল টাকায় রেমিট্যান্স নয়।
অনেকেই দেশে বসে ফ্রিল্যান্সিং করে অথবা বিদেশি কোম্পানিতে চাকরি করে বৈদেশিক মুদ্রা আয় করে কিন্তু এগুলো রেমিট্যান্সের অন্তর্ভুক্ত নয় এসব উপার্জন রপ্তানি আয়ের অন্তর্ভুক্ত। ফ্রিল্যান্সিং এবং দেশে থেকে বিদেশী কোম্পানিতে চাকরি করা সেবার রপ্তানি হিসেবে বিবেচনা করা হয় অর্থাৎ রেমিট্যান্স একটি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত হচ্ছে বিদেশে অবস্থান করে দেশে টাকা পাঠানো।
প্রবাসী-প্রেরিত অর্থ
রেমিট্যান্স বা প্রবাসী-প্রেরিত অর্থ হচ্ছে প্রবাসে কর্মরত কোন অভিবাসী কর্মী তার নিজের দেশে যে টাকা পাঠিয়ে থাকে তাকেই মূলত প্রবাসী প্রেরিত বলা হয়ে থাকে। আপনি যদি না বুঝে থাকেন তাহলে সহজ ভাষায় আবারো বলছি প্রবাসী প্রেরিত অর্থ হচ্ছে বাংলাদেশ থেকে যেসব মানুষ বাইরের দেশে কর্মরত রয়েছে এবং সেখানে কাজ করে যে টাকা দেশে পাঠায় তাকেই মূলত প্রবাসী প্রেরিত অথবা রেমিডেন্স যোদ্ধা বলা হয়ে থাকে।
প্রবাসী-প্রেরিত অর্থ খবর
সকল দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুদ্রা বিনিময় এবং আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে প্রতিবছর রেমিট্যান্সের প্রবাহ নির্ণয় করে বিশ্ব ব্যাংক। ২০২০ সালে বিশ্বের শীর্ষ রেমিট্যান্স অর্জনকারী দেশ ছিল ভারত গত বছর রেমিট্যান্স থেকে ভারতের উপার্জন হয়েছে ৮৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০০৮ সাল থেকে ভারত রেমিট্যান্স আয়ের শীর্ষ অবস্থান ধরে রেখেছে।
আরো পড়ুনঃ সৌদি আরবের কোম্পানি নাম
শীর্ষ রেমিট্যান্স অর্জনকারী দেশগুলোর ভেতর বাংলাদেশের অবস্থান অষ্টম। বিগত বছরগুলোতে বাংলাদেশের রেমিট্যান্স আয়ের পরিমাণ কিছুটা বেড়েছে। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে তৈরি পোশাক খাতের পরেই প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স এর অবদান সবচেয়ে বেশি। বর্তমানে প্রবাসীরা যে পরিমাণ দেশে টাকা পাঠাচ্ছে তা দেশের মোট রপ্তানির আয়ের অর্ধেক।
এছাড়া অর্থনৈতিক উন্নয়নে রেমিট্যান্সের অবদান মোট জিডিপির প্রায় ১২ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী করনাকালীন সময়ে প্রবাসীরা রেকর্ড পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা দেশে পাঠিয়েছে। করোনার আগের বছর প্রবাসীরা পাঠিয়েছিল ১ হাজার ৮২০ কোটি ডলারের আর করোনা মহামারীর সময় পাঠিয়েছে ২ হাজার ৪৭৮ কোটি ডলার। আশা করি প্রবাসী-প্রেরিত অর্থ আপডেট খবর জানতে পেরেছেন।
বাংলাদেশের রেমিট্যান্স খাত
অনেক প্রবাসী কিংবা বাংলাদেশী ভাইয়েরা বাংলাদেশের রেমিট্যান্স খাত সম্পর্কে জানতে চেয়ে থাকেন তাই এখন বাংলাদেশের রেমিট্যান্স খাত নিয়ে কিছু কথা বলব। সময় টিভি তথ্য অনুযায়ী জানা গেছে এই বছরে বাংলাদেশে রেমিটান্স ২৩ বিলিয়ন ডলার এ পৌঁছাবে এবং আগামী বছরগুলোতেও বাংলাদেশের রেমিটেন্সের পরিমাণ একই থাকবে বলে ধারণা করা গেছে।
তবে যেহেতু বাংলাদেশ সরকার পরিবর্তন হয়েছে তাই প্রবাসীরা বেশি বেশি রেমিট্যান্স পাঠাবে বলে জানিয়েছে তাই ধারণা করা গেছে সামনের বছরগুলোতে বাংলাদেশের রেমিট্যান্স ২৩ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি আসবে।
রেমিট্যান্স বোনাস কত
প্রবাস থেকে যারা বাংলাদেশে টাকা পাঠিয়ে থাকে তারা অনেকেই জানতে চেয়ে থাকে বর্তমানে রেমিট্যান্স বোনাস কত অর্থাৎ প্রবাস থেকে যে টাকা পাঠানো হয়ে থাকে সরকার সে টাকার বোনাস কত দিয়ে থাকে। যেসব প্রবাসীরা বৈধ পথে দেশে টাকা পাঠাবে তাদের রেমিট্যান্স প্রণোদনা বাড়ানো হয়েছে। আগে প্রণোদনা ২ শতাংশ ছিল তবে এখন ২.৫ শতাংশ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়।
আপনি যদি এখন বাংলাদেশের যেকোনো ব্যাংকে এক লক্ষ টাকা পাঠান তাহলে আপনি আড়াই হাজার টাকা বোনাস পাবেন। আশা করি রেমিট্যান্স বোনাস কত বর্তমানে তা জানতে পেরেছেন।
রেমিট্যান্স প্রণোদনা
বাংলাদেশ সরকার বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠানো কে উৎসাহিত করতে ২০১৯-২০২০ অর্থবছর থেকে দুই শতাংশ হারে প্রণোদনা দিচ্ছে অর্থাৎ ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠালে প্রতি ১০০ টাকায় ২ টাকা করে নগদ প্রণোদনা পাচ্ছেন প্রবাসীর সজনরা। ২০২১-২০২২ অর্থবছরের বাজেটে রেমিট্যান্স খাতে প্রণোদনের জন্য ৪০০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
বাংলাদেশে রেমিট্যান্স প্রেরণকারী শীর্ষ দেশ
সংযুক্ত আরব আমিরাতে বাস করেন ১৫ লাখের বেশি প্রবাসী বাংলাদেশী। ২০২৩ সালে এক লাখ দুই হাজার বাংলাদেশী কর্মসংস্থান ভিসায় দেশটিতে আসেন। করোনা পরবর্তী সময়ে বিপুল মানুষের কর্মসংস্থান হওয়ায় রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়েছে। বিশ্বের তৃতীয় অবস্থানে থাকা আমিরাত রেমিট্যান্স পাঠানোর তালিকায় উঠে এসেছে এক নম্বরে।
বৈধ পথে পাঠাতে বাংলাদেশ মিশন ও বাংলাদেশ কমিউনিটির ব্যাপক প্রচারণা বাংলাদেশ ব্যাংকের নানামুখী পদক্ষেপ সরকারের প্রণোদনা সহ এক্সচেঞ্জ হাউজগুলো শ্রমিক বান্ধব কর্মসূচির ফলে এমন সাফল্য বলে দাবি সংশ্লিষ্টদের। আশা করি বাংলাদেশ রেমিট্যান্স প্রেরণকারী শীর্ষ দেশ কোনটি তা জানতে পেরেছেন।
বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স আসে কোন দেশ থেকে
বাংলাদেশ প্রতিবছর যে পরিমাণ রপ্তানি করে তার চেয়ে বেশি পণ্য আমদানি করে সেক্ষেত্রে চলতি হিসেবে ভারসাম্য আনে প্রবাসীদের পাঠানো অর্থ রেমিট্যান্স। বাংলাদেশ ব্যাংকের সবশেষ তথ্য অনুসারে গত অর্থবছর বৈধ পথে সাড়ে ২১ বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিট্যান্স এসেছে দেশে এরমধ্যে ৮টি দেশ থেকে ১ বিলিয়ন ডলারের বেশি অর্থ চলুন জেনে নেই বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স আসে কোন দেশ থেকে সেই তথ্য।
- সৌদি আরব
- যুক্তরাষ্ট্র
- আরব আমিরাত
- যুক্তরাজ্য
- কুয়েত
- কাতার
- ইতালি
- মালয়েশিয়া
১. সৌদি আরবঃ সব থেকে বেশি রেমিটান্স আসে মধ্য প্রাচীর দেশ সৌদি আরব থেকে গত বছর দেশটি থেকে রেমিট্যান্স এসেছে প্রায় ৩.৮ মিলিয়ন ডলার। বর্তমানে সর্বোচ্চ সংখ্যক বাংলাদেশী কর্মরত রয়েছেন সৌদি আরবে। ১৯৭৬ সাল থেকে দেশটিতে বাংলাদেশিরা যাচ্ছেন কাজ নিয়ে ২০২৩ সালের এই সংখ্যা ৫৫ লাখে গর্নিত হয়েছে।
আরো পড়ুনঃ দুবাই ভিসার আজকের খবর
২. যুক্তরাষ্ট্রঃ বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স আসে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ২০২২ অর্থবছরের দেশটি থেকে রেমিট্যান্স এসেছে ৩.৫ বিলিয়ন ডলার এর আগের অর্থ বছরেও দেশটি থেকে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ প্রবাসী আয় এসেছিল।
৩. সংযুক্ত আরব আমিরাতঃ দেশটিতে ২৫ লাখের বেশি বাংলাদেশি কর্মী কর্মরত রয়েছে। গত অর্থ বছর দেশটি থেকে ৩ বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিট্যান্স এসেছে।
প্রবাসী-প্রেরিত অর্থ সম্পর্কিত প্রশ্ন ও উত্তর (FAQ)
প্রশ্নঃ প্রবাসীদের প্রেরিত অর্থ কে কি বলা হয়?
উত্তরঃ প্রবাসীদের প্রেরিত অর্থ বলতে বাংলাদেশের অর্থনীতি সচল রাখার প্রধান চালিকাশক্তি।
প্রশ্নঃ রেমিটেন্স কত প্রকার ও কি কি?
উত্তরঃ রেমিটেন্স বিদেশ থেকে দেশে টাকা পাঠানো বোঝাই এবং আন্তর্জাতিক রেমিটেন্স দুই প্রকার এক অন্তমুখী আর দুই হচ্ছে বহি-মুখী রেমিটেন্স।
প্রশ্নঃ প্রবাসী বাংলাদেশির সংখ্যা কত?
উত্তরঃ বাংলাদেশের প্রবাসী প্রায় সকল দেশে রয়েছে এবং বাংলাদেশের প্রবাসী সংখ্যা প্রায় ২৮ লক্ষ আর এর চারভাগের অর্ধেক থাকে সৌদি আরবে এবং একভাগ থাকে আরব আমিরাতে।
প্রশ্নঃ রেমিট্যান্স এর অর্থ কি?
উত্তরঃ রেমিট্যান্স অর্থ হল বিদেশী কর্মী অর্থাৎ বাংলাদেশ থেকে যেসব কর্মী বিদেশে গিয়ে কাজ করে বাংলাদেশে টাকা পাঠায় তাদেরকে মূলত রেমিটেন্স যোদ্ধা বলা হয়ে থাকে।
লেখকের শেষ কথা
প্রিয় পাঠক আপনি যদি একজন প্রবাসী হয়ে থাকেন তাহলে আপনি অবশ্যই বৈধভাবে দেশে টাকা পাঠাবেন তাহলে সবথেকে নিরাপদ এবং সুবিধা। তো এই আর্টিকেলে প্রবাসী-প্রেরিত অর্থ ও বাংলাদেশের রেমিট্যান্স খাত আপডেট তথ্য জানিয়েছি আশা করি আপনি সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়েছেন। যারা দেশের বাইরে রয়েছেন এবং দেশে টাকা পাঠাচ্ছেন তারাই মূলত প্রবাসী-প্রেরিত বা রেমিট্যান্স যোদ্ধা।
আপনাদের পাঠানো টাকাতেই বাংলাদেশের অর্থনীতি সচল রয়েছে তাই আপনারা বেশি বেশি টাকা পাঠানোর চেষ্টা করবেন যেন বাংলাদেশ দ্রুত এগিয়ে যেতে পারে। আপনার যদি প্রবাসী-প্রেরিত এবং রেমিট্যান্স নিয়ে আর কোন প্রশ্ন থেকে থাকে তাহলে নিচে কমেন্ট করে আমাদেরকে জানাতে পারেন ধন্যবাদ।