আজকের এই আর্টিকেল পর্বে লিভোস্টার সিরাপ এর কাজ কি এবং লিভোস্টার সিরাপ খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। লিভোস্টার সিরাতের জেনেটিক নাম হচ্ছে লিভোসালবিওটামল, এটি শিশুদের ক্ষেত্রে বেশি ব্যবহার হলেও প্রাপ্তবয়স্ক কিশোর ও ছয় বছরের ঊর্ধ্বে শিশুদের রিভারসিবল অফ স্ট্রাক্টিভেশনালি রোগে ব্রংকাস্পাজন প্রতিরোধের জন্য নির্দেশিত।
এক কথায় বলতে গেলে লিভোস্টার সিরাপ (Levostar) একটি ব্রঙ্কোডিলেটর যা শ্বাসতন্ত্রের সমস্যায় ব্যবহৃত হয়। এর প্রধান উপাদান লিভোসালবিওটামল যা শ্বাসনালির সংকোচন কমিয়ে শ্বাস নিতে সহায়তা করে। সাধারণত, এটি ব্রঙ্কোস্পাজম বা হাঁপানি এবং অন্যান্য শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যার চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। চলুন তাহলে লিভোস্টার সিরাপ এর কাজ কি, খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
লিভোস্টার সিরাপ এর কাজ কি
লিভোস্টার সিরাপ, যা লেভোসালবুটামল নামেও পরিচিত, মূলত শ্বাসকষ্ট এবং কাশি সংক্রান্ত সমস্যার চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। এটি একটি ব্রঙ্কোডাইলেটর, যা শ্বাসনালীকে প্রসারিত করতে সাহায্য করে। এই সিরাপটি সাধারণত হাঁপানি, ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ (COPD) এবং অন্যান্য শ্বাসনালীজনিত সমস্যার চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়।
লিভোস্টার সিরাপ শরীরে প্রবেশ করার পর বেটা-২ অ্যাড্রেনার্জিক রিসেপ্টরকে উদ্দীপিত করে, যা শ্বাসনালীকে প্রশস্ত করে এবং বুকে জমে থাকা কফের পরিমাণ কমাতে সাহায্য করে। এটি শিশুদের এবং বয়স্কদের জন্যও নিরাপদভাবে ব্যবহার করা যেতে পারে, তবে এর সঠিক ডোজ এবং ব্যবহার পদ্ধতি অনুসরণ করা অত্যন্ত জরুরি। এই সিরাপের কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া থাকতে পারে, যেমনঃ
- হৃদস্পন্দনের অস্বাভাবিকতা
- পেশীর কাঁপুনি
- বমি ও বমি বমি ভাব
- পেটের ব্যথা
- মাথা ব্যথা
তাই, গর্ভবতী মহিলা ও স্তন্যদানকারী মায়েদের জন্য ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে, যারা গুরুতর শ্বাসকষ্টের রোগে ভুগছেন, তাদের জন্যও সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।
সারসংক্ষেপে, লিভোস্টার সিরাপ শ্বাসতন্ত্রের সমস্যাগুলির চিকিৎসায় কার্যকর, তবে এটি সঠিকভাবে ব্যবহার করতে হবে এবং যেকোনো অস্বাভাবিক লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ করতে হবে। আশা করি লিভোস্টার সিরাপ এর কাজ কি তা জানতে পেরেছেন।
লিভোস্টার সিরাপ খাওয়ার নিয়ম
আমাদের মধ্যে অনেকে রয়েছেন যারা ইতিমধ্যে লিভোস্টার সিরাপ খাওয়ার কথা ভাবছেন কিংবা খেতে চলেছেন তারা লিভোস্টার সিরাপ খাওয়া সঠিক নিয়ম হয়তো জানেন না আর যদি কোন ওষুধ সঠিক নিয়মে না খাওয়া হয় তাহলে উল্টে বিপরীত হতে পারে কিংবা ওষুধে নাও কাজ করতে পারে তাই লিভোস্টার সিরাপ খাওয়ার নিয়ম জানা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
আরো পড়ুন: Largo Cream এর কাজ কি? ব্যবহারের নিয়ম
এই লিভোস্টার সিরাপটি প্রাপ্তবয়স্ক এবং ছোট বাচ্চাদের কিংবা মাঝারি বয়সের বাচ্চাদের খাওয়ানো হয়ে থাকে এই ওষুধটির মূল কার্যকারিতা হচ্ছে শ্বাসনালীর সমস্যা সমাধান করা। এই সিরাপটি প্রাপ্তবয়স্করা এক থেকে দুই চামচ করে দিনে ৩ বার খাবেন এবং ৬ থেকে ১২ বছর বয়সী শিশুরা ১ চামচ করে দিনে ৩ বার খাবেন।
যাদের তীব্র অ্যাজমা ও হৃদরোগ আছে তাদের ক্ষেত্রে এই ওষুধটি খাওয়ানোর ব্যাপারে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। আপনাদের বুঝার সুবিধার্থে আমি নিজে আবারো ওষুধটি ব্যবহারের নিয়ম ও কিছু সর্তকতা উল্লেখ করলাম।
ব্যবহারের নিয়ম ও সতর্কতাঃ
- সিরাপটি প্রাপ্তবয়স্ক এবং ৬ বছরের বেশি বয়সী শিশুদের ক্ষেত্রে নিরাপদভাবে ব্যবহার করা যায়। তবে গর্ভবতী নারী ও স্তন্যদানকারী মায়েদের ক্ষেত্রে ব্যবহার করার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে, কারণ এটি মাতৃদুগ্ধে নিঃসৃত হতে পারে।
- গুরুতর শ্বাসকষ্ট বা কার্ডিওভাসকুলার সমস্যা থাকলে এই ওষুধ ব্যবহারে সতর্ক হতে হবে। বিশেষত যারা অন্য বেটা-অ্যাড্রেনার্জিক ড্রাগ নিচ্ছেন, তাদের ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ অত্যন্ত জরুরি
লিভোস্টার সিরাপ কি কাজ করে
লিভোস্টার সিরাপ (Levostar Syrup) মূলত শ্বাসকষ্ট, হাঁপানি (asthma), এবং ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ (COPD)-এর মতো শ্বাসতন্ত্রজনিত রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। এটি একটি ব্রঙ্কোডাইলেটর, যা শ্বাসনালীকে প্রসারিত করে এবং শ্বাসপ্রশ্বাস সহজ করে তোলে। বিশেষ করে শ্বাসকষ্ট বা কাশির সময় ফুসফুসের ভেতরের সংকোচন দূর করতে সাহায্য করে এই ওষুধটি।
লিভোস্টার সিরাপের প্রধান উপাদান হল লেভোসালবুটামল, যা ফুসফুসে বেটা-২ অ্যাড্রেনার্জিক রিসেপ্টরকে উদ্দীপিত করে। এর ফলে শ্বাসনালীর পেশি শিথিল হয় এবং শ্বাসনালী প্রসারিত হয়, ফলে রোগী সহজে শ্বাস নিতে পারে। এটি ফুসফুসে জমে থাকা কফ কমাতেও সহায়তা করে, যা বিশেষত হাঁপানি বা ব্রঙ্কাইটিস রোগীদের জন্য উপকারী। আশা করি এবার লিভোস্টার সিরাপ কি কাজ করে তা জানতে পেরেছেন।
লিভোস্টার সিরাপ এর দাম
লিভোস্টার সিরাপ সাধারণত ৫০ মিলিলিটার এবং ১০০ মিলিলিটার বোতলের হয়ে থাকে। ৫০ মিলিলিটার সিরাপের দাম প্রায় ৩০.১০ টাকা, এবং ১০০ মিলিলিটার সিরাপের দাম প্রায় ৪৫.০০ টাকা। তবে বিভিন্ন ফার্মেসিতে দাম কিছুটা পরিবর্তিত হতে পারে, তাই শিরাপটি কিনার সময় দাম সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া ভালো।
সিরাপটি মূলত ব্রঙ্কোস্পাজমের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয় এবং এটি শ্বাসকষ্ট বা অ্যাজমার সমস্যা সমাধানে কার্যকরী। এর দাম এবং কার্যকারিতা সম্পর্কে আরো বিস্তারিত জানতে ফার্মেসির সাথে যোগাযোগ করতে পারেন।
লিভোস্টার ১ এর কাজ কি
লিভোস্টার ১ সিরাপ (Levosalbutamol) মূলত শ্বাসকষ্টের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। এটি একটি ব্রঙ্কোডাইলেটর, যা শ্বাসনালীতে স্নায়ুদের প্রভাবিত করে এবং সেখানকার পেশীকে শিথিল করে, ফলে শ্বাস প্রশ্বাসের সমস্যা কমাতে সহায়তা করে। এটি হাঁপানি এবং অন্যান্য রিভার্সিবল অবস্ট্রাকটিভ এয়ারওয়ে ডিজিজের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়।
আরো পড়ুন: Algin Tablet কেন খায়? কাজ কি
এই সিরাপটি প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য প্রতি ৫-১০ মিলিলিটার দৈনিক তিন বার এবং ৬ থেকে ১১ বছর বয়সী শিশুদের জন্য ৫ মিলিলিটার তিন বার নেওয়া উচিত। তবে, এটি সেবনের পূর্বে ডাক্তার বা স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের পরামর্শ গ্রহণ করা উচিত।
লিভোস্টার সিরাপ ও ওষুধ সম্পর্কে কিছু সতর্কতা
শিশুদের শ্বাসতন্ত্র খুব নাজুক আর অতি সংবেদনশীল তাই হিমেল হাওয়ায় বা আবহাওয়ার পরিবর্তনে তাদের চট করে কাশি হয়ে যায়। সাধারণ এই কাশিতে অনেকে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই কারো কাছ থেকে শুনে কিনে নেন কাশির ওষুধ আর দিনে দু’একবার দু তিন চামচ করে খাওয়াতে থাকেন কিন্তু আপনি জানেন না যে এতে শিশুর ক্ষতি হতে পারে।
কারণ সব কাশি এক নয় কাশি রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন ধরনের ভিন্ন ভিন্ন কারণ আর তার জন্য অবশ্যই ভিন্ন ভিন্ন ওষুধ খেতে হবে অনেকে আবার বাড়িতে থাকা বড়দের কফ সিরাপ একটু কম পরিমাণে বা কম মাত্রায় শিশুদের খাইয়ে দেন এটিও গুরুতর ভুল।
সেন্টার ফর ডিসিস কন্ট্রোলারের হিসাব মতে ২০০৪ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের কফ সিরাপ খেয়ে ১৫০০ জন শিশুর বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যা হয়েছে তাই ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া আপনার শিশুকে কোন ওষুধ খাওয়াবেন না। তাই অবশ্যই লিভোস্টার সিরাপ খাওয়ানোর আগে একজন ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন।
লেখকের শেষ কথা
যাদের খুশখুসে কাশি কিংবা হাঁপানি অথবা শ্বাসনালী সমস্যা আছে তারা এই লিভোস্টার সিরাপটি ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী সেবন করতে পারেন এটি খুবই ভালো এবং কার্যকরী একটি সিরাপ। এই পোস্টে লিভোস্টার সিরাপ এর কাজ কি, খাওয়ার নিয়ম জানিয়েছি আশা করি আপনি সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়েছেন এবং উপকৃত হয়েছেন। আপনার যদি লিভোস্টার সিরাপ সম্পর্কে আর কোন প্রশ্ন থেকে থাকে তাহলে নিচে কমেন্ট করে জানাতে পারেন।