বাতের ব্যথা কথাটার সাথে পরিচিত নয় এমন মানুষের সংখ্যা খুব কম। আমাদের মধ্যে অনেক মানুষই আছেন যারা বাতের ব্যথা সমস্যায় ভুগছেন। কিছু খাবার রয়েছে যেগুলো খেলে বাতের ব্যথা বাড়ে তাই আজকের এই আর্টিকেলে কি খেলে বাতের ব্যথা বাড়ে এবং বাতের ব্যাথা কমানোর উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।
বাতের ব্যথা যার হয় একমাত্র সেই বুঝে এই রোগের কি যন্ত্রনা রাতের ঠিকমত ঘুমাতেও পারে না এবং কোন কাজ ঠিকমতো করা যায় না এই বাতের ব্যথার কারণে। এই সমস্যার জন্য দায়ী হতে পারে কিছু খাবার যে খাবার খেলে বাতের ব্যথা অতিরিক্ত বাড়িয়ে দেয়। চলুন তাহলে কি খেলে বাতের ব্যথা বাড়ে এবং বাতের ব্যাথা কমানোর উপায় কি সে সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
বাতের ব্যথার লক্ষণ
অনেকেই বাতের ব্যথার লক্ষণ সম্পর্কে জানতে চেয়ে থাকেন যা এই অংশে আমরা আলোচনা করব। বাত ব্যথা একটি প্রচলিত সমস্যা যা বিভিন্ন কারণে হয়ে থাকে। এই রোগটি সাধারণত পায়ের হেটু এবং হাতের আঙ্গুল ও গিরাতে আক্রান্ত হয়ে থাকে এবং এই রোগটি সাধারণত বয়স্ক মানুষদের বেশি হয়ে থাকে।
বাত ব্যথা বেশ কয়েক ধরনের রয়েছে কারো কারো জয়েন্টে জয়েন্টে ব্যথা করে এবং ফুলে যাই আবার কারো কারো পুরো শরীর ব্যথা করে। বাতের ব্যথার বেশ কয়েকটি লক্ষণ রয়েছে যেগুলি অনুভব করলে বুঝবেন এটি বাতের ব্যথা। চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক বাতের ব্যথার লক্ষণ গুলি কি কি।
- জয়ন্তী জয়েন্টে ব্যাথা করা এই রোগের প্রধান লক্ষণ।
- হালকা হালকা জ্বর হওয়া বা জ্বর জ্বর ভাব।
- শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া বা কাশি অনুভব হওয়া।
- চোখ লাল হয়ে যাওয়া।
- হাত-পা ঝিমঝিম করা।
- নখ, হাতের গিরা, কব্জি, প্রচুর ব্যথা করা।
- ত্বকে ফুসকুড়ি ওঠা।
- মুখের ভেতরে ঘা হওয়া।
- ব্যাথা কমে যাওয়ার পর স্থানটি ফুলে যাওয়া।
- সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর শরীর ব্যথা করা।
- বেলা বাড়ার সাথে সাথে ব্যথা কমে যাওয়া অথবা বেড়ে যাওয়া।
- কোন কাজ করার সময় শরীর ব্যথা করা বা একটু হাঁটলেই হেটু ব্যথা করা।
ওপরের উল্লেখিত লক্ষণ গুলো যদি আপনার মধ্যে দেখা গিয়ে থাকে তাহলে বুঝবেন এটি বাতের ব্যথা। আর এই বাতের ব্যথা দীর্ঘদিন যাবত থাকলে বিভিন্ন জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে তাই চেষ্টা করুন একজন ডাক্তার কে জানানো এবং প্রতিদিন ব্যায়াম করুন ওজন নিয়ন্ত্রণ রাখুন মানসিক চাপ কমান।
কি খেলে বাতের ব্যথা বাড়ে
বিশেষ করে শীতের সময় বাতের ব্যথা দ্বিগুণ বেড়ে যায় এছাড়া আমাদের দৈনন্দিন জীবনের খাবার তালিকায় কিছু খাবার রয়েছে যেগুলো খেলে বাতের ব্যথা দ্বিগুণ বেড়ে যায়। আপনি যদি বাতের ব্যথা সমস্যায় ভুগে থাকেন তাহলে আপনার খাবার তালিকায় কিছু খাবার রয়েছে যেগুলো বাদ দিতে হবে তাহলে আপনি বাতের ব্যথা থেকে মুক্তি পেতে পারেন চলুন তাহলে কি খেলে বাতের ব্যথা বাড়ে সে খাবারগুলির নাম জেনে নেওয়া যাক।
- অতিরিক্ত মিষ্টি খাবারঃ এই অতিরিক্ত মিষ্টি জাতীয় খাবার খেলে সব ধরনের ব্যথা বাড়িয়ে দিতে পারে আর এই ব্যথার মূল কারণ হচ্ছে সাইটোকাইনস। আর এই সাইটোকাইনস এর মাত্রা বাড়িয়ে দেয় অতিরিক্ত মিষ্টি খাবার অথবা চিনি যে কারণে বাতের ব্যথা বেড়ে যায় তাই অতিরিক্ত মিষ্টি খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
- দুগ্ধজাতীয় খাবারঃ অনেকেই বাতের ব্যথায় ভোগে থাকে বিশেষ করে যাদের কোমর ব্যথা রয়েছে তাদের জন্য দুধ এবং দুগ্ধজাতীয় খাবার উপকার নাও হতে পারে কারণ দুধ এবং দুধ জাতীয় খাবারে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন থাকে যা অস্থিসন্ধির আশেপাশে যেসব টিস্যু থাকে সেগুলোতে অস্বস্তি তৈরি করে এবং দুধজাতীয় খাবার খেলে এলার্জির প্রদাহও বেড়ে যায়।
- অতিরিক্ত মদ্যপানঃ আপনার যদি অতিরিক্ত মদ্যপান করার অভ্যাস থেকে থাকে তাহলে তা দ্রুত পরিত্যাগ করেন কারণ মদ্যপান করলে বাতের ব্যথা দিয়ে গুণ বেড়ে যায় এছাড়া অ্যালকোহল অস্টিওআর্থারইটিসের ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়।
- ভুট্টার তেলঃ এই ভুট্টা তেলে প্রচুর পরিমাণে ওমেগা ৬ ফ্যাটি এসিড রয়েছে যার শরীরের প্রদাহ বাড়িয়ে তোলে। তবে খাবার তালিকায় পুরোপুরি ওমেগা ৬ ফ্যাটি এসিড বাদ দেওয়া যাবে না তাই খেতে হবে পরিমাণ মতো এতে করে বাতের ব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।
- ডিমের কুসুমঃ আমরা সবাই ডিম খেতে পছন্দ করি এবং পুষ্টির দিক দিয়ে এগিয়ে ডিমের কুসুম কিন্তু আপনি কি জানেন বাতের ব্যথা বাড়িয়ে দিতে পারে এই ডিমের কুসুম কেননা এই ডিমের কুসুমে রয়েছে অ্যারাকিডনিক অ্যাসিড যা বাতের ব্যথা বাড়িয়ে তোলে তাই ডিমের কুসুম খাওয়া থেকে বিরত থাকুন তবে আপনি ডিমের সাদা অংশ খেতে পারেন।
- রেডি মিটঃ প্রক্রিয়াজাত মাংস এবং রেডিমিট বাতের ব্যথা আরো বাড়িয়ে তুলতে পারে। কারণ রেডিমিটে থাকে টক্সিন গ্লাইকেশন নামক একটি উপাদান যা প্রদাহ আরো বাড়িয়ে তোলে। শরীরে প্রদাহ বেড়ে গেলে লিভারে সি-রিঅ্যাকটিভ প্রোটিন নামক এক ধরনের প্রোটিন তৈরি হয় যার কারণে বাতের ব্যথা বেড়ে যায়।
- অতিরিক্ত লবণঃ বাতের ব্যথা সমস্যা থাকলে অতিরিক্ত লবণ খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে কারণ লবণে থাকে সোডিয়াম যা বাতের ব্যথা বাড়িয়ে দিতে পারে।
- ময়দা, সাদা চিনি ও কিছু ফলমূলঃ সাদা চিনি, ময়দা, আমরা জাতীয় ফল এবং শিকড় জাতীয় ফল এছাড়া টমেটো, লেবু খাওয়া যাবেনা কারণ এগুলো সকল ধরনের ব্যথা বাড়িয়ে তোলে।
- কিছু শাকসবজিঃ কিছু শাকসবজি রয়েছে যেগুলো খেলে বাতের ব্যথা বেড়ে যেতে পারে যেমনঃ ফুলকপি, বাঁধাকপি, পুঁইশাক, পালং শাক ইত্যাদি এইসব শাকসবজি খাওয়া থেকে কিছুটা এড়িয়ে চলুন।
বাতের ব্যথা হলে কি করা উচিত
যারা দীর্ঘদিন যাবত বাতের ব্যথায় ভুগছেন তারা অনেকেই বাতের ব্যথা দূর করতে বিভিন্ন উপায় খুঁজছেন আর এই উপায় খুঁজতে খুঁজতে আমরা অনেক সময় ভুল চিকিৎসা করে থাকি যা কোন কাজে আসে না।বাতের ব্যথা দূর করার মূল চিকিৎসা হচ্ছে বাতের ওষুধ এবং আমাদের দৈনন্দিন জীবনের কিছু বাজে অভ্যাস পরিত্যাগ করা তাহলেই আপনি বাতের ব্যথা থেকে মুক্তি পেতে পারেন।
আপনি যদি প্রতিদিন সকালবেলা উঠে ১৫ থেকে ৩০ মিনিট মতো ব্যায়াম করেন তাহলে শরীরের বিভিন্ন জয়েন্টগুলো উন্নতি হবে এছাড়া ব্যায়াম করলে পেশি শক্ত হয় এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। এবং একটি গবেষণায় দেখা গেছে শরীরে ভিটামিন ডি এর ঘাটতি দেখা দিলে ভাতের ব্যথা বেড়ে যায় তাই বেশি বেশি করে ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার খান যেমন ডিম, মাশরুম ইত্যাদি।
শরীরকে হাইড্রেট রাখা অত্যন্ত জরুরী তাই সবার আগে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করতে হবে এতে করে বাতের ব্যথা থেকে দূরে থাকা যাবে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে। আপনার যদি বাতের ব্যথা উঠে তাহলে ব্যথা জায়গাটিতে আইসপ্যাক দিয়ে ঠান্ডা চাপ দিন ফলে পধাও এবং ব্যথা অনেকটাই কমে যাবে। এছাড়া আপনি গরম পানি দিয়ে গোসল করতে পারেন অথবা ব্যথা স্থানটিতে গরম সেঁক দিতে পারেন এতে করেও ওষুধের মত চমৎকার ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।
বাতের ব্যাথা কমানোর উপায়
বাত ব্যথার নাম শুনেননি এমন একজনও নেই। বাত ব্যথা একটি রোগ না অনেকগুলো রোগকে একত্রিত করে সেটিকে বলা হয় বাত ব্যথা। বাত ব্যথা কে মেডিকেলের পরিভাষায় বলা হয়ে থাকে আর্থ্রাইটিস।
বেশিরভাগ বয়স্ক মানুষই এই বাতের ব্যথায় ভুগছেন আপনিও যদি এই সমস্যায় ভুগে থাকেন তাহলে কিছু উপায় রয়েছে যেগুলি মেনে চললে আপনি এই বাতের ব্যথা থেকে মুক্তি পেতে পারেন। চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক ভাতের ব্যথা কমানোর উপায় গুলো সম্পর্কে। বাতের ব্যথা কমাতে মূল উপায় হচ্ছে খাবারে পরিবর্তন আনা। কিছু খাবার রয়েছে যেগুলো আপনার প্রতিদিনের খাবার তালিকায় রাখলে বাতের ব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
বাতের ব্যথা কমাতে যেসব খাবারগুলো খাবেনঃ-
- মাছ
- সয়াবিন
- পিয়াজ রসুন
- বাদাম
- অলিভ অয়েল
- গমের রুটি
- গ্রিন টি
- ব্রকলি
- ডেইরি ফুড
উপরের উল্লেখিত খাবার গুলো খাওয়ার পাশাপাশি আপনি সপ্তাহে অন্তত দুইবার ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড সমৃদ্ধ মাছ খাবেন যেমনঃ রূপচাঁদা, ইলিশ ও পাঙ্গাস ইত্যাদি। কারণ একটি গবেষণায় জানিয়েছে ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড কমাতে অনেক সাহায্য করে।
প্রতিদিন হালকা ব্যায়াম করুন এতে করে হাত ও পায়ের জয়েন্ট গুলো উন্নতি হবে। ব্যায়াম করার পাশাপাশি আপনি পর্যাপ্ত পরিমাণে বিশ্রাম নিবেন। কারণ বাতের ব্যথা শুরু হলে আপনাকে স্বাভাবিকের চাইতে বেশি বিশ্রাম নিতে হবে তাহলে ব্যথা অনেকটাই কমবে। এছাড়া আপনি প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করবেন দিনে অন্তত ৬ থেকে ৮ গ্লাস পানি পান করার চেষ্টা করবেন।
বাতের ব্যথা কোথায় কোথায় হয়
অনেকেই জানতে চেয়ে থাকেন বাতের ব্যথা কোথায় কোথায় হয়। বাত বা আর্থ্রাইটিস হলো একটি অটোইমিউন ব্যাধি যা আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ সিস্টেম অর্থাৎ ইমিউন সিস্টেম এবং হাত ও পায়ের জয়েন্টে আক্রমণ করে যার ফলে হাত ও পায়ের গিরায় গিরায় জয়েন্টে জয়েন্টে ব্যথা হয় এবং ব্যথা স্থানটি ফুলে যায়।
উপসংহার
প্রিয় পাঠক আপনি যদি বাতের ব্যথা কমাতে চান তাহলে আর্টিকেলে উল্লেখিত খাবারগুলি পরিহার করুন এবং প্রতিদিন একটু করে ব্যায়াম করুন পানি বেশি বেশি করে খান এবং ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবন করুন তাহলে এই বাতের ব্যথা থেকে মুক্তি পেতে পারেন।
এই আর্টিকেলে কি খেলে বাতের ব্যথা বাড়ে এবং বাতের ব্যাথা কমানোর উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি আশা করি আপনি সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়েছেন এই পোস্টটি যদি ভালো লেগে থাকে তাহলে বন্ধু এবং পরিবারের সাথে শেয়ার করে দিবেন আর আপনার যদি কোন প্রশ্ন অথবা মতামত থেকে থাকে তাহলে নিচে কমেন্ট করে আমাদেরকে জানাতে পারেন ধন্যবাদ।