এজমা খুবই মারাত্মক ক্ষতিকর একটি রোগ। তাই আজকের এই আর্টিকেলে আপনাদের সাথে এজমা হলে কি কি খাওয়া নিষেধ এবং এজমা হলে কি করনীয় সম্পর্কে আলোচনা করব। এজমা সাধারণ গত শীতকালে এ রোগটির আক্রান্ত সংখ্যা বেড়ে যায় । তাই আসুন এক নজরে জেনে নিই শীতকালে এজমা থেকে পরিধান পেতে হলে কি কি করণীয়। এজমা খুবই অসস্তিকর রোগ।
আজ আমরা কিছু বিশেষজ্ঞ পুষ্টি বিদদের কাছ থেকে জেনে নেব, এজমা হলে কি কি খাওয়া নিষেধ এবং এটি থেকে সুস্থ থাকার সঠিক গাইডলাইন। চলুন তাহলে আমরা জেনে নিই এজমা হলে কি করনীয় এবং এজমা লক্ষণ কি সেই সম্পর্কে।
এজমা কেন হয়
এজমা সম্পর্কে আমরা কম বেশি সবাই পরিচিত আছি । আমরা কিংবা আমাদের আশেপাশের অনেক মানুষ এই সমস্যায় ভুগছে। সাধারণত এই রোগটি শীতকালে বেশি প্রভাব বিস্তার করে। কারণ এ সময় বাতাসে ধুলাবালি বেশি থাকে। শিশুসহ নানা বয়সী মানুষরা এ রোগে আক্রান্ত হয়। ব্যক্তিবেদে এজমার উপসর্গ ও লক্ষণ ভিন্নতা দেখা দেয়। আরো শোনা যায় যে এ রোগের কোন নিরাময় নেই।
এজমা হলে কি কি খাওয়া নিষেধ
এজমা হলে কি কি খাওয়া নিষেধ এ বিষয়ে পপুলার মেডিকেল কলেজ এন্ড হসপিটাল এর ডাক্তার নিষাদ শারমিন নিশি জানান প্রতিদিনই খাবারের তালিকা একটু পরিবর্তন রাখার ই বুদ্ধিমানের কাজ হবে। যেমন চিংড়ি মাছ, গরুর মাংস, বেগুন ইত্যাদি। প্রথমতই এজমা সমস্যা থাকলে শুকানো জাতীয় ফল খাওয়া থেকে এড়িয়ে চলবেন। পেটের মধ্যে গ্যাস সৃষ্টি হবে এমন খাবার এড়িয়ে চলতে হবে যেমন রসুন ভাজাপোড়া জাতীয় খাবার ইত্যাদি। কিছু কিছু মাছ এ রোগের জন্য ভীষণ ক্ষতিকর।
এজমা হলে কি করনীয়
এজমা একটি শ্বাসনালী বাঁধাকস্ত করার মতো রোগ যা থেকে মুক্ত পাওয়া বড়ই অসহায়। এজমা রোগ হলে সাধারণত দুই ধরনের ওষুধ খুবই ব্যবহার হয়ে থাকে। এজমা রোগ নিয়ে জাতীয় বৃক্ষব্যাধি হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটের বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডাক্তার কৃষ্ণচন্দ্র গাঙ্গুলি বলেন শিশুদের ক্ষেত্রে পাঁচ বছরে চিকিৎসা করে প্রায় ৭০% থেকে ৮০% এবং অন্য বয়স্ক লোকের ক্ষেত্রে ৩০% থেকে ৪০% বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ভালো হয়ে থাকে।
আরো পড়ুনঃ সেরা গ্যাস্ট্রোলিভার বিশেষজ্ঞ ডাক্তার ঢাকা
এক্ষেত্রে তিনি বলেন বর্তমানে আধুনিকতার ছোঁয়ায় পূর্বের থেকে এখন যে ওষুধগুলো ব্যবহার করা হয় তা বেশিরভাগই ইনহেলার আকারে ব্যবহার করি এ ক্ষেত্রে অনেকগুলো সুবিধা আছে। সুবিধা হচ্ছে ইনহেলারে অত্যন্ত কম ওষুধ ব্যবহার করতে হয়।
ইনহেলারে মাধ্যমে দুই পাপ দিলে হয় ২০০ মাইক্রগ্রাম এরকম যখন দেয়া হয় তৎক্ষণিক শরীরের ভিতরে প্রবেশ করে ফুসফুসের শ্বাসনালির যে মিউকাস মেমোরিন ঝিল্লি আছে সেখানে গিয়ে লাগে এবং সরাসরি সেখান থেকে শ্বাসনালী কে সম্পোসারিত করে।
এছাড়াও এটি কিন্তু রক্তের সাথে মিশে না। এবং পরবর্তীতে যখন শ্বাস ছাড়ে তখন দেহ থেকে বের হয়ে যায়। তাই এটি ব্যবহারে বন্য যে কোন পশুদের থেকে কম ক্ষতিকর এবং কম খরচে রোগটির চিকিৎসা চালিয়ে যেতে পারে।
এজমা লক্ষণ কি
এজমা রোগের শ্বাসনালীতে সবসময়ের চেয়ে দীর্ঘ মিউকাস ক্ষয় হয়ে থাকে এতে শ্বাসনালী চিকন হয়ে যায়। এরপরে নিচের লক্ষণগুলো দেখা দিতে পারেঃ-
- দ্রুত শ্বাস নেওয়া
- শ্বাস প্রশ্বাসের কষ্ট
- বুকে চাপ ধরে রাখার মত অনুভব
- শ্বাস নেওয়ার সময় নয়েজ সৃষ্টি হওয়া
- বুকে ভারি ভারি ভাব
- হঠাৎ শ্বাস-প্রশ্বাস আটকে যাওয়া
- সর্দি কাশি ইত্যাদি
কিছু শিশুদের পারিবারিক ও পরিবেশগত কারণে এই রোগে আক্রান্ত হয়। সকল বয়সী মানুষরা এ রোগে আক্রান্ত হলেও বেশিরভাগ টাইমে শিশুরা ঝামেলা পরে বেশি।
এজমা কি ভাল হয়
ইন্ডিয়ান ডক্টর শুভ চক্রবর্তীর মতে এজমা এমন একটি রোগ যেটা আমাদের পপুলেশনের হয়তো ১৫ থেকে ২০ ভাগ পপুলেশনে রয়েছে কিন্তু অনেকেই প্রথমেই কোন প্রকার গুরুত্ব না দিয়ে ভালো চিকিৎসা না করে রোগটিকে জটিলের পথে নিয়ে যায়।
এবং খাওয়ার প্রতি রেস্ট্রিকশন চলে আসে। এজমা হলে কি কি খাওয়া নিষেধ তা অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে। এবং এটি শুরুতেই চিকিৎসা না করলে রোগটি চিরতরের জন্য বাসা বেধে রয়ে যায়।
এজমা থেকে চিরতরে মুক্তির উপায়
এজমা হলে কি করণীয় এবং এটা থেকে চির তরে মুক্তির উপায় বিষয়ে জাতীয় বৃক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের বৃক্ষব্যাধি মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডক্টর মোহাম্মদ আশিক ইমরান খান বলেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব মতে বিশ্বব্যাপী প্রায় ২৩৫ মিলিয়ন এজমা রোগে আক্রান্ত রোগী রয়েছে। তিনি আরো বলেন এটি সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
তিনি বলেন সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে এজমা রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব এক্ষেত্রে দরকার রোগে আক্রান্ত প্রাথমিক অবস্থায় চিকিৎসা নেওয়া। এক্ষেত্রে দরকার খাবার এবং কিছু নিয়ম কারণ মেনে চলা। ধূলিকণা এড়িয়ে চলা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা ইত্যাদি বিষয়ে মেনে চলা।
এজমা থেকে মুক্তির ঘরোয়া উপায়
শ্বাসকষ্ট কিংবা এজমা যাদের রয়েছে তারা একটু দৌড়ালেই দেখা যায় যে হাঁপিয়ে যায় কিংবা একটু দৌড়ালে শ্বাসকষ্ট উঠে যাচ্ছে এরকম অনুভূতি হয় এবং শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে আবার দেখা যায় যে একটু পরিশ্রম করার পর আপনি হাঁপিয়ে যাচ্ছেন তাহলে এই সমস্যাগুলো থেকে আপনি থেকে আপনি যদি ভালো হতে চান তাহলে এজমা থেকে মুক্তির ঘরোয়া উপায় রয়েছে সেটা হচ্ছে কিছু এক্সারসাইজ অর্থাৎ ব্যায়াম।
আরো পড়ুনঃ largo cream এর কাজ কি
এজমা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য বেশ কিছু ব্যায়াম রয়েছে হয়তো আপনারা সেগুলো সম্পর্কে জানেন না যে ব্যায়ামগুলো করলে দেখা যাচ্ছে যে খুব দ্রুত আপনার এই শ্বাসকষ্ট কিংবা এজমা দূর করতে পারবেন। তো চলুন কি কি ব্যায়াম করলে আপনার এই এজমা সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন তা জেনে নেওয়া যাক।
- প্রথমে আপনি যেটা করবেন সেটা হচ্ছে নাক দিয়ে নিশ্বাস নিয়ে মুখ দিয়ে বের করে দিবেন এভাবে বেশ কয়েকবার করবেন।
- তারপর দ্বিতীয় এক্সারসাইজ হচ্ছে নাক দিয়ে নিঃশ্বাস নিয়ে কিছুক্ষণ পর অর্থাৎ যতক্ষণ আপনি নাক দিয়ে নিঃশ্বাস নিয়ে ধরে রাখতে পারবেন ততক্ষণ নিঃশ্বাস ধরে রেখে মুখ দিয়ে আবার ছেড়ে দিবেন এইভাবে বেশ কয়েকবার করবেন।
- তৃতীয় নাম্বার এক্সেসাইজটি হচ্ছে ফু দেওয়া অর্থাৎ কোন কিছু আমরা ফু দিয়ে নিভাছি যেমন আপনি একটি বেলুন নিবেন সেটাকে ফু দিয়ে ফোলাবেন অথবা এমনিতেই নিঃশ্বাস নিয়ে জোরে করে ফু দিবেন আর এটাও একটি এক্সারসাইজ।
- তবে এইসব এক্সেসাইজ করার আগে প্রথমে একটু ব্যায়াম করে হাত-পা ভালোভাবে ঝাঁকিয়ে নিবেন। আপনি যদি এইভাবে প্রতিনিয়ত এই ব্যায়ামগুলো করতে থাকেন তাহলে দেখবেন এক সময় আপনার শ্বাসকষ্ট কমে আসছে এবং নিঃশ্বাস নিতে সুবিধা হবে।
এজমা থেকে মুক্তির উপায় হোমিওপ্যাথি
সারা বিশ্বে যেমন এলোপ্যাথি উপর নির্ভরশীল ঠিক তেমনি অনেক মানুষের রয়েছে যারা হোমিওপ্যাথির ওপর অনেকটাই নির্ভরশীল আগের চাইতে হোমিওপ্যাথি ওষুধ অনেকটাই উন্নত হয়েছে যার ফলে এজমা থেকে মুক্তির উপায় হিসাবে হোমিওপ্যাথি সেবন করছে। এখন আপনাদের এজমা থেকে মুক্তির উপায় হোমিওপ্যাথি ওষুধের বেশ কয়েকটি নাম জানাবো যেগুলো ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী সেবন করতে পারেন।
- Belladonna: ফাস্ট মেডিসিন যেটা কিনা এজমার জন্য খুব ভালো কাজ করে থাকে সেটার নাম হচ্ছে Belladonna। এই Belladonna খুব ভালো এজমার কাজ করে থাকে। বর্ষাকাল, স্যতসেতে মৌসুম এইখানে কিন্তু এজমা দূর করতে Belladonna খুব ভালো কাজ করে থাকে।
- Aralia Racemosa: Aralia এই হোমিওপ্যাথি মেডিসিনটাও এজমা কিংবা হাঁপানির খেতে খুব ভালো কাজ করে থাকে। যাদের নাক দিয়ে সকালবেলা পানি পড়ে এবং মাঝরাতের দিকে হঠাৎ করে শ্বাসকষ্ট সমস্যা হওয়া এসব রোগীদের জন্য এই Aralia হোমিওপ্যাথি মেডিসিন টা খুব ভালো কাজ করে থাকে।
- Arsenic Album: যাদের মাঝরাতে দিকে শ্বাসকষ্ট বাড়ে এবং যত রাত বাড়ে তত শ্বাসকষ্ট বেড়ে যায় এবং রোগী সামনের দিকে ঝুঁকে থাকলে আরাম পায় এরকম পরিস্থিতিতে Arsenic Album হোমিওপ্যাথি মেডিসিনটি এজমা কিংবা হাঁপানি দূর করতে অনেক ভালো কাজ করে থাকে।
লেখকের শেষ কথা
আশা করছি আপনি উপরের কথাগুলো মনোযোগ সহকারে পড়েছেন এবং এজমা হলে কি কি খাওয়া নিষেধ ও এজমা হলে কি করনীয় এ সম্বন্ধে ধারণা অর্জন করতে পেরেছেন। এই পোস্টটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে অন্যদের সাথে শেয়ার করে দিবেন । এবং আপনার যদি কোন প্রশ্ন থেকে থাকে তবে নিচে কমেন্ট এর মাধ্যমে আমাদেরকে জানাতে পারেন। ধন্যবাদ।